Home / সাক্ষাৎকার / আর্থিক খাতের সুশাসন, নিশ্চিত করবে পুঁজিবাজারের দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়ন: রকিবুর রহমান

আর্থিক খাতের সুশাসন, নিশ্চিত করবে পুঁজিবাজারের দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়ন: রকিবুর রহমান

ডেইলি শেয়ারবাজার ডেস্ক: পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা ধরে রাখতে এবং বাজারকে
স্ট্যাবল এবং ভাইব্র্যান্ট রাখতে হলে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনা জরুরী। আমরা দেশব্যাপী সকলে একটি স্বচ্ছ,  জবাবদিহিতামূলক ও গতিশীল পুঁজিবাজার দেখতে চাই। যে পুঁজিবাজারের মাধ্যমে ভালো শিল্প উদ্যোক্তারা বাজার থেকে টাকা তুলবে এবং তা শিল্প প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারন, আবাসন, নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজে ব্যবহার করবে এবং দেশের শিল্প উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে অবদান রাখবে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনার উপর বাড়তি কোন চাপ থাকবেনা দীর্ঘমেয়াদী শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য।

বর্তমান বাজারের গতি প্রকৃতি দেখে আমরা বলতে পারি পুঁজিবাজারের উপর বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরে এসেছে। যাদের হাতে টাকা আছে তারা সকলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ শুরু করেছে। তারই
প্রতিফলন আমরা এক্সচেঞ্জের টার্ণওভার এ দেখতে পাচ্ছি। আমরা সকলে আগামী তিন বছরের মধ্যে ডেইলী টার্ণওভার ৫০০০ কোটি টাকায় লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, ইনশআল্লাহ। শুধু ইক্যুইটি মার্কেটের উপর নির্ভর না হয়ে বিভিন্ন নতুন নতুন
প্রডাক্ট বাজারে নিয়ে আসার জন্য বিএসইসি এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। Central CounterParty (CCP) চালু হচ্ছে, দ্রুততার সাথে বিনিয়োগকারীদের Day Settlement সহ নতুন নতুন প্রডাক্টস, সুকুক ডেরিভেটিভস/ ফিউচার চালু করার প্রচেষ্টা জোড়েশোরে শুরু হয়েছে। এসএমই প্লাটফর্ম ডিএসই
তৈরী করে ফেলেছে। সরকারী ভালো ভালো শেয়ার বাজারে এনে বাজারের গভীরতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। দেশীয় ভালো ভালো প্রাইভেট কোম্পানির শেয়ার এবং মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির শেয়ার বাজারে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সফল,
সৎ ও দক্ষ উদ্যোক্তাদের পুঁজিবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করে নিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আগ্রহ বাড়ছে। Bond Market Strong হচ্ছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে জিডিপি তে মার্কেট
ক্যাপিটালাইজেশন এর অবদান ৫০% শতাংশের লক্ষমাত্রা নিয়ে বিএসইসি এবং এক্সচেঞ্জ এগিয়ে যাচ্ছে। বাজারে বিনিয়োগকারীদের পার্টিসিপিসান বাড়ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন বিনিয়োগকারী বাজারে আসছে। কোন অবস্থাতে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।

বিএসইসি কমিশনকে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে। বিএসইসি যত কঠোর অবস্থানে থাকবে ততবেশী বাজার ভালো থাকবে। বিএসইসি কোন অবস্থাতে বাজারকে নিয়ন্ত্রন করবেনা, ইনডেক্সকে নিয়ন্ত্রন করবেনা। শেয়ারের দাম উঠানামা করলে ইনডেক্স বাড়ে এবং কমে। সেটাই স্বাভাবিক। বাজারে Free Float শেয়ার বেশি
থাকলে বাজার স্বাভাবিক থাকে। Free Float শেয়ার যে কোম্পানির বেশি থাকে সে কোম্পানির শেয়ার ম্যানিপুলেট করে বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই। কারণ যেসব কোম্পানির মৌল ভিত্তি ভাল এবং Free Float শেয়ার বেশী তারা নিজস্ব স্ট্রেংথ এ
বাড়ে। এই সকল শেয়ারের EPS, P/E Ratio, Reserve, Business Expansion, Companies’ মূলধন, দক্ষ পরিকল্পনা ও পরিচালনার কারনে Matured বিনিয়োগকারী বেশী বেশী বিনিয়োগ করতে আগ্রহী থাকে। অপর দিকে ‘জেড’ গ্রুপের শেয়ার, স্মল পেইড- আপ ক্যাপিটাল শেয়ার, নন-পারফরম্যান্স শেয়ারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ম্যানিপুলেশন করে শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বাড়িয়ে ম্যানিপুলেট করে সহজে বাড়িয়ে নেওয়া যায়। এই সকল কোম্পানির লেনদেন এর ক্ষেত্রে বিএসইসি এবং এক্সচেঞ্জকে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে। বাজারকে এগিয়ে নিতে হলে লিষ্টেড কোম্পানিগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা বিশেষ জরুরী। ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন ২৪% শতাংশ হোল্ড করে এবং সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এই সফল প্রতিষ্ঠানের Free-Float শেয়ার অনেক বেশি। বিনিয়োগকারীদের হাতে সর্বোচ্চ ৭০% পর্যন্ত শেয়ার আছে। বাজারের গতিশীলতা ধরে রাখতে হলে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ব্যাংকে যারা স্পন্সর/ডিরেক্টর আছেন তাদের বুঝতে হবে। তারা ব্যাংকের মালিক নয় তারা শেয়ারহোল্ডার। পারিবারিক নিয়ন্ত্রন থেকে এই সকল স্পন্সর/ডিরেক্টরদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। ব্যাংক ডিপোজিটরদের টাকায় চলে, সেসব পরিচালকের টাকায় চলে না। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, ব্যাংকের উদ্যোক্তা, পরিচালকেরা ২০০৯/২০১০ সালে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে, ১০ টাকার শেয়ার মার্কেটে ১৭০ টাকা পর্যন্ত, বিক্রি করেছেন এবং হাজার হাজার বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণা করেছেন। আজ সেইসব শেয়ারের দাম ফেসভ্যালু, ১০ টাকার নীচে। উদ্যোক্তা, পরিচালকরা বলেন উনারা ব্যাংক ভালোভাবে পরিচালনা
করছেন, যদি তা হয় সেসব উদ্যোক্তা পরিচালকগণ, যারা ১০ টাকার শেয়ার ১৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন তারা এখন শেয়ার বাই-ব্যাক করছেন না কেন? কারণ তারা ভালো করে জানেন তারা ব্যাংকের টাকা লুটপাট করে ব্যাংকের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। মাননীয় অর্থমন্ত্রী পার্লামেন্টে বলেছিলেন, এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংকের পরিচালকদের এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত ম্যানেজমেন্টের সাথে নামে/ বেনামে ভুল তথ্য দিয়ে/
ভূয়া জমি দেখিয়ে/ জাল দলিল পত্র দাখিল করে সরকারী খাস জমি বন্ধক রেখে/ ডোবা/খাল জলাশয় দেখিয়ে ১ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে।

ব্যাসেল-৩ পরিপালন করার অযুহাতে বছরের পর বছর শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার ইস্যু
করে নিজেদের শেয়ার সংখ্যা বাড়িয়েছে অপর দিকে বেশি দামে শেয়ার কিনে বিনিয়োগকারী প্রচন্ডভাবে লোকসানের কবলে পড়েছেন। অপরদিকে ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া যে সকল কোম্পানির মৌলভিত্তি ভাল এবং Free Float শেয়ার বেশী,
বাজারে তাদের শেয়ারের দামও বিগত বছরগুলোতে অনেক কমে গিয়েছিলো। কিন্তু ভালো ফান্ডামেন্টাল শেয়ার ধরে রাখতে পারলে কোন অবস্থাতেই বিনিয়োগকারীকে লাভ দিতে না পারলেও লোকসান গুনতে হয় না, ইতিহাসের দিকে তাকালে তা ষ্পষ্ট হয়।

ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে বিএসইসি কে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে। যে কোন অবস্থায় ব্যাংকগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দক্ষ ও সৎ
ম্যানেজমেন্ট গড়ে তুলতে হবে এবং ব্যাংক পরিচালকদের বুঝাতে হবে এটা তার পারিবারিক প্রতিষ্ঠান না। ব্যাংক ডিপোজিটরদের ডিপোজিট এর টাকায় চলে। এর মালিক সকল শেয়ারহোল্ডার। এখনো অনেক ব্যাংকের তথাকথিত স্পন্সর/ ডাইরেক্টররা
বাংকগুলোকে তাঁদের পারিবারিক সম্পত্তি মনে করেন, তাঁরা এটা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। অনেক সময় তাঁরা নিয়ম- নীতিরও তোয়াক্কা করেন না।

কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্বতন্ত্র পরিচালকদের মতামতেরও তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়না। আমার জানামতে, অনেক ব্যাংক তাদের বোর্ড মিটিং/ কমিটি
মিটিং এর proceedings Minutes আকারে রাখেন না, রেকর্ড করে রাখেন। রেকর্ড যেকোনো সময় ধ্বংস করা সম্ভব। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিএসইসি কমিশন/ বাংলাদেশ ব্যাংক একটি বিশেষ উদ্যোগ
নিবেন যাতে করে ব্যাংকগুলো তাদের প্রতিটি মিটিং এর proceedings Minutes আকারে রাখেন এবং তা সংরক্ষণ করেন। ব্যাংকের বর্তমান কার্য-পরিচালনার প্রণালী, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, স্বতন্ত্র পরিচালকদের ব্যাংকে contribution, সব কিছুর দলিল হল
বিভিন্ন মিটিং এর Minutes, যা আর্থিক খাতের সুশাসন আনয়নে বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে বলে আমি মনে করি।
বিএসইসি কমিশন, সেন্ট্রাল ব্যাংক একসাথে কাজ করে বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। Honest, Professional, Dedicated ক্ষুদ্র পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে। যে সকল বিনিয়োগকারী এবং প্রতিষ্ঠানের ২% শেয়ার আছে তাদের পরিচালনা পর্ষদে সহজে Include করতে হবে। স্পন্সর, ডাইরেক্টরদের কোন কোন ওজর, আপত্তি চলবে না। কারন আমরা বাস্তবে দেখি স্পন্সর ডাইরেক্টররা তাদের পছন্দমত পরিচালক নিয়োগ দিতে চান, এটা বন্ধ করতে হবে। যাদের ২% শেয়ার আছে তাদের অটোমেটিক্যালি বোর্ড এ Include হওয়ার পথ করে দিতে হবে। এতে যদি বোর্ড এর আকার বাড়ে
তাতে কোন অসুবিধার কারণ নেই। বরং এতে করে যারা বাজার থেকে শেয়ার কিনে পরিচালক হবেন তাদের দায়িত্ব, Commitment to the Investors আরো বেশি থাকবে। এতে করে স্বতন্ত্র পরিচালক এবং শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের যৌথ
পরিচালনায় ব্যাংকগুলো দুরবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। ব্যাংকের লুটপাট বন্ধ হবে। ব্যাংকের অব্যবস্থাপনা দূর হবে। ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার প্রতি বিনিয়োগকারীর আস্থা বাড়বে। তাতে করে বাজার আরো ভাল ও বড় হবে।
ব্যাংকের লেনদেন আরো বাড়বে। বর্তমানে যে সকল স্পন্সর/ডাইরেক্টরদের বিরুদ্ধে সামান্যতম অভিয়োগ আছে, যারা বিভিন্নভাবে ঋণখেলাপী হয়ে আছেন অথবা যারা অবৈধভাবে ব্যাংকের লুটপাট খাতে সহযোগিতা করেছেন, তাদেরকে অবশ্যই
ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কে কঠোর আইনের মধ্যে থাকতে হবে। সবাইকে বুঝতে হবে ব্যাংক ব্যাবস্থা যত ভালো থাকবে দেশের অর্থনীতি তত ভালো থাকবে। পুঁজিবাজার ও ভালো থাকবে। এখনি উপযুক্ত
সময় সব কিছু ঠিকঠাক করার। ঋণ খেলাপীকে কঠোর আইনের আওতায় এনে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। জনগনের টাকা লোন করে যাতে কেউ পার পেয়ে না যায় সেদিকে বিশেষ নজরদারি বাড়িয়ে সরকারের মাননীয় অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংক
ও বিএসইসিকে কঠোর অবস্থানে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি আগে অনেকবার বলেছি এখনও বলছি, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপীদের লাইফস্টাইল এ হাত দিতে হবে। দেওলিয়া আইনের সংশোধন করে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। কাউকে জেল দিয়ে
কোন লাভ হবে না। লাইফস্টাইলে হাত দিলে দেখবেন অনেক টাকা পরিশোধ করে দিচ্ছে। কেউ আর নিজেকে দেওলিয়া ঘোষণা করবে না। দেওলিয়া ঘোষণার কারনে তার বাড়ি গাড়ি কিছুই থাকেবে না, ছেলেমেয়েদের দামী স্কুলে পড়াতে পারবে না। প্লেনে চড়তে পারবে না। বিদেশে যেতে পারবে না। বড় বড় সরকারী বেসরকারী পার্টিতে জয়েন করতে পারবে না। এই সকল ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন দেশ, চায়না, থাইল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ইন্ডিয়া ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপী থেকে ৭০% – ৯০% পর্যন্ত টাকা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের সফল অর্থমন্ত্রীকে এই ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে বলব, আপনার সফলতা দিন দিন বাড়ছে, অনুরোধ করবো আপনি অর্থনীতির বিভিন্ন দিকগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই জায়গায় বাস্তবতায় আলোকে সঠিক পদক্ষেপ নেয়ার জন্য।
এই মহামারীতে দেশের সবাই আর্থিকভাবে কষ্টে আছে। সফল, সৎ ও দক্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ বিশেষ করে, গার্মেন্টস মালিকেরা তাদের ইন্ডাস্ট্রি চালিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখছেন যাতে করে দেশে কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, নিম্ন- মধ্যবিত্ত/মধ্যবিত্ত কেউ কর্মহীন না হয়ে পড়ে। অপর দিকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা আরাম-আয়েশে থাকবে তা হতে পারেনা। এই সকল ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর
অবস্থানে না থাকলে, ঋণ আদায়ে সঠিক এবং বাস্তব উদ্যোগ না নিলে ভালো ভালো উদ্যোক্তারা হতাশ হয়ে পড়বেন। অনেকে হয়তো ভাববে অথবা ভাবতে শুরু করেছেন যে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অথবা ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট এবং পরিচালকের সহায়তায়
যদি টাকা নেওয়া যায় তাহলে বেশী সৎ থেকে থেকে লাভ কি? এতে টাকাও পাওয়া যাবে এবং টাকা ফেরতও দিতে হবে না। এই ধরনের একটি মেন্টালিটি তৈরী হওয়ার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি কে উদ্যোগ নিতে হবে এবং অবশ্যই ব্যাংকগুলোর মধ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আবারো বলছি, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীর আস্থা অনেক বেড়ে যাবে এবং লেনদেনও
বাড়বে। বিএসইসি কমিশনকে আমি অনুরোধ করবো আপনারা যত কঠোর হবেন বাজার তত গতিশীল হবে। বিনিয়োগকারী কোন সময়ে, কোন দামে শেয়ার কিনবে এটা
তার একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। পৃথিবীর সবদেশে শেয়ারের দাম বাড়ে এবং কমে। ডিমান্ড/সাপ্লাই এর উপর শেয়ারের দাম নির্ভর করে, বিএসইসি কোন সময় কোন শেয়ারের দাম কত হবে তা নির্ধারণ করতে পারেন না। এবং এটা বলতে পারেন না যে কোন শেয়ারের দাম এত বৃদ্ধির ফলে পরবর্তী একমাস তার দর বৃদ্ধির তদারকি করতে। বিএসইসি এর কাজ এইটা না। বিএসইসি মূল কাজটা হলো বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, আইন/ রুলস/ রেগুলেশনস এর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা, ইনসাইডার ট্রেড/ মার্কেট ম্যানিপুলেশন বন্ধ করা। লিস্টেড কোম্পানিসহ ব্রোকারস, যারা পুঁজিবাজারের সাথে সম্পৃক্ত তাদের সবাইকে কঠোর কমপ্লায়েন্সের মধ্যে রাখা। বিএসইসি বলবেনা কোন কোম্পানির শেয়ার ভালো, কোন সেক্টর এর শেয়ারগুলো ভাল হবে। এটা বিএসইসি এর কাজ না। বিনিয়োগকারী ঠিক করবে সে কি পাবে। এটা তার দায়িত্ব। আমাদের আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলতে হবে, নিজের সুবিধা মতো কোন আইন তৈরী করা যাবে না এবং কাউকে কোন বিশেষ সুবিধা দেওয়া যাবে না।

যে সকল কোম্পানির Free-Float শেয়ার বেশি সেগুলোর ম্যানুপুলেশন করে শেয়ারের দাম বৃদ্ধি করা প্রায় অসম্ভব। দ্বিতীয়তঃ এখনতো ব্যাংকের টাকা তার নিয়মের মধ্যে থেকে বিনিয়োগ করতে হচ্ছে, ম্যানুপুলেশন কড়াকড়িভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ, কৃত্রিমভাবে বাজারকে Bubble করে দেওয়া এখন আর সম্ভব না। বাজারে কালো টাকা আসছে, বড় বড় বিনিয়োগ আসছে, দিন দিন বিনিয়োগকারী বাড়ছে। আমি মনে
করি, এই সকল বিনিয়োগকারী সতর্কতার সাথে বিনিয়োগ করছেন। বড় বড় বিনিয়োগকারীর সুবিধা হলো ভালো শেয়ার তারা যে দামে কিনুন না কেন শেয়ারের দাম যদি পড়েও যায় তারা চিন্তিত হন না কারন তারা শেয়ারটা ধরে রাখার ক্ষমতা
রাখেন। পুঁজিবাজারের ইতিহাসে দেখা গেল একটি ভালো এবং ফান্ডামেন্টাল শেয়ারের দাম পড়ে গেলেও পরবর্তীতে তার দাম আবারো বাড়ে। অতএব, ভয় হলো শুধু ছোট ছোট
বিনিয়োগকারীদের, যারা স্বল্প পুঁজি নিয়ে বাজারে আসেন, যারা বাজারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করতে চান না এবং অল্প সময়ে লাভ করতে চান। তাদের জন্য সবচেয়ে রিস্ক থেকে যায়। আমি বার বার বলছি যারা স্বল্প টাকা নিয়ে পুঁজিবাজারে আসবে তারা
যেন সতর্কতার সাথে বিনিয়োগ করেন। বিএসইসি কমিশন বাজারে স্বচ্ছতা/জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছেন। অতএব, আপনার দায়িত্ব আপনার কষ্টার্জিত সঞ্চয়ের একটি অংশ পুঁজিবাজারে দক্ষতার সাথে বিনিয়োগ করুন। আশা করি আপনি লাভবান হবেন ইনশআল্লাহ। শুধু বুঝবেন টাকাটা যেহেতু আপনার দিনের শেষে লাভও আপনার, লোকসানও আপনার। এখানে কাউকে বিশেষ করে সরকারকে অথবা বিএসইসি কমিশনকে আপনার Blame করার কোন সুযোগ নেই। পরিশেষে বলবো, বাজারের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএসইসি
সুশাসন অবশ্যই প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ১০০% সঠিক ডিসক্লোজারের ভিত্তিতে ভালো ভালো কোম্পানি আনতে হবে। বাজারে শেয়ার সরবরাহ বাড়াতে, সরকারী ভালো শেয়ার এনে
বাজারকে আরোবেশী গতিশীল করতে হবে। পুঁজিবাজার হছে শিল্পায়নে এবং কর্মসংস্থানে টাকার মূল উৎস, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়। আমি দৃঢ়ভাবে আমার বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় বৃঝি সরকার/ মাননীয় অর্থমন্ত্রী/ বাংলাদেশ ব্যাংক/ বিএসইসি/ এক্সচেঞ্জসহ
সবাই পুঁজিবাজারের জন্য সঠিক কাজটি করে যাচ্ছে। এইভাবে বিএসইসি কমিশনের সব সময়ে কঠোর অবস্থানের কারনে বাজার ইনশআল্লাহ অনেকদূর যাবে। হাজারো বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ আসবে। শিল্প প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো উন্নয়নে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দেশ আরো এগিয়ে যাবে। আগামী তিন বছরে দেশের পুঁজিবাজারে ৫০০০ কোটি টাকার লেনদেন হবে, ইনশআল্লাহ। বঙ্গবন্ধু কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবং তার সফল অর্থমন্ত্রীর স্বপ্ন পূরণ হবে। সরকার বড় বড় ইনফ্রাস্টাকচারে যে বিনিয়োগ করবে তা কোম্পানিতে রূপান্তর করে, পুঁজিবাজারে তার শেয়ার ছেড়ে জনগন থেকে টাকা নিয়ে দেশের অর্থনীতিতে যুগান্তকারী অবদান রাখতে পারবে। জনগনের সঞ্চয়ের একটি বড় অংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট অবদান ইনশআল্লাহ। যদি পুঁজিবাজার ভালো থাকে সবচেয়ে লাভবান হবে সরকার। উন্নয়নের জন্য টাকার একটি বড় অংশ আসবে জনগনেরর সঞ্চয় থেকে। তাতে করে জনগনের সঞ্চয়ের টাকা আনপ্রডাক্টতিভ খাত যেমন জমি জমায় বিনিয়োগ কম হবে অথবা টাকা বিদেশে পাচার হবেনা। এটাই হবে সরকারের বড় সাফল্য।

মোঃ রকিবুর রহমান
সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড

ডেইলি শেয়ারবাজার ডটকম/এম এইচ

Check Also

কিভাবে বিনিয়োগের জন্য একটি ভালো কোম্পানি এনালাইসিস করতে হয়

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার পূর্বে একটি ভালো কোম্পানি কিভাবে বিশ্লেষণ করে বের করতে হয় তা আমাদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *